গাউনের সঙ্গে ভেইল। ঐতিহ্যবাহী বাঙালি কনের শাড়ির সঙ্গে ওড়না। ভাষা আলাদা, জিনিস কিন্তু একই। ওড়না কনের পোশাকের একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশেষত্ব যোগ করতে যেমন ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথের নাতবউ ডাচেস অব সাসেক্স মেগান মার্কেলের বিয়ের ওড়নায় কারুশিল্পীরা সেলাই করে দিয়েছিলেন ৫৩টি ফুল। সেখানে থাকা প্রতিটি ফুল ছিল কমনওয়েলথভুক্ত একেকটি দেশের প্রতীক। আর এই তো কিছুদিন আগে হয়ে যাওয়া বলিউড তারকা দীপিকা পাড়ুকোনের সিন্ধি রীতির বিয়ের ওড়নায় সুই–সুতার ফোঁড়ে লিখে দেওয়া হলো ‘সদা সৌভাগ্যবতী ভব’ মানে ‘সদা সৌভাগ্যবতী হও’। বিয়েতে আমন্ত্রিত শুভাকাঙ্ক্ষীরা কনের মাথায় হাত রেখে ঠিক যেই আশীর্বাদটি করেন, সেটিই যেন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জি ওড়নায় লিখে দিতে চাইলেন; যা পুরো বিয়ের আসরজুড়ে দীপিকা পরে ছিলেন।
কোরাল ক্লসেট বুটিকের ডিজাইনার রুপো শামস জানালেন, এখন আগেকার দিনের ফ্যাশনই ঘুরেফিরে চলতি ফ্যাশনের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে। ষাটের দশকের কিরণ দেওয়া ওড়না এখন আবার ফিরে এসেছে। এ ধরনের ওড়নাই দীপিকা তাঁর সিন্ধি রীতির বিয়েতে পরেছিলেন। তা ছাড়া এখন কনের ওড়নায় দেখা যাচ্ছে কাশ্মীরি টিল্লা কাজ। ইদানীং জরি, চুমকির নকশাও কনের ওড়নায় ফিরে আসছে। ওড়নাজুড়ে গোটা ওয়ার্ক বা জারদৌসি নকশাও খুব জমকালো লাগবে বিয়ের অনুষ্ঠানে। কিন্তু ওড়নাটি বেশি ভারী না করে হালকা রাখাই ভালো। কারণ, বিয়ের পোশাক এমনিতে অনেক ভারী হয়। এ জন্য ওড়নার কাপড় ও নকশা হালকা হলে কনের পক্ষে বহন করতে আরামদায়ক হবে। এতে মোটা জারদৌসি কাজ না করে ছোট ছোট ও চিকন সুতার কাজ করলে যেমন আভিজাত্য ফুটে উঠবে, তেমনি ভারীও মনে হবে না।
এখন মসলিন বা নেট কাপড় দিয়েই বেশির ভাগ কনের ওড়না তৈরি হয়। এমন স্বচ্ছ ওড়নার মধ্য দিয়ে খোঁপার ফুলও দেখা যায়। আবার অনেকে বেলি বা রজনীগন্ধা দুই কানের পাশে ছড়িয়ে পড়তে চান। হালের জনপ্রিয় ফ্যাশন ট্রেন্ড কাতান বা বেনারসির ওড়না পরলে ফুল পরার এই ঢং অনুসরণ করতে পারেন। ভায়োলা বাই ফারিহা ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনার ফারিহা তাসমিন বলেন, মসলিন কাপড়ের চারপাশে লেস বসিয়ে কনে নিজের পছন্দমতো ওড়না তৈরি করে নিতে পারেন। ওড়নাটি জমকালো করার জন্য এর জমিনে বসিয়ে নিতে পারেন পাথর। চার কোনায় থাকল টারসেল বা ঝুনঝুনি।
বিয়ের অনুষ্ঠানে সাধারণত বাঙালি কনে লাল শাড়িতেই সাজতে ভালোবাসেন। লাল বেনারসির সঙ্গে একই রঙের ওড়না বেশি মানিয়ে যায়। কেউ চাইলে অবশ্য বেনারসির সুতার সঙ্গে মিলিয়ে সোনালি ওড়নাও নিতে পারেন। বউভাত কিংবা বাগদানে পরার জন্য এমন বাঁধাধরা কোনো রং নেই। আবার আজকাল অনেক কনে গায়েহলুদেও ওড়না পরছেন। তাই এই অনুষ্ঠানগুলোতে শাড়ির পাড় কিংবা পোশাকের কোনো একটি নকশার রং থেকে মিলিয়ে ওড়না পড়লেও ভালো লাগবে। তবে একেবারে অসামঞ্জস্যপূর্ণ না পরাই ভালো।
কনের ওড়না কেবল তাঁর পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে করলেই হবে না। মাথায় সেসব গয়না পরবেন তার নকশার কথাও ওড়না কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে। ডিজাইনাররা এমনটাই মনে করেন।
কনের জন্য তৈরি (রেডিমেড) ওড়না তো বাজারে কিনতে পাওয়াই যায়। অনেক সময় বিয়ের শাড়ির সঙ্গেও এটি দেওয়া থাকে। তবে নতুনত্ব আনার জন্য বিয়ের সময় নিজেই হয়ে যেতে পারেন ডিজাইনার। ঢাকার চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, মৌচাক, আনারকলি, ইস্টার্ন মল্লিকা, পিংক সিটি ও প্রিয়াঙ্গন মার্কেটে অনেক রকম লেস, চুমকি ও টারসেল পাওয়া যায়। অনেক লেস ফিতার দোকানেও কারিগর দিয়ে ওড়নায় লেস বসানোর ফরমাশ নেওয়া হয়। লেসের ধরন ও কয় লাইনের লেস লাগাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে খরচ নির্ধারণ হয় সেখানে। তবে আগেই জেনে রাখুন, ঠকতে না চাইলে দোকানির সঙ্গে এসব জায়গায় দামাদামি করতে হবে প্রচুর। কনের ওড়নার জন্য পৌনে তিন গজ কাপড়ই যথেষ্ট। বহর বেশি এমন কাপড় কেনা ভালো। দেখতে হবে চওড়ায় যেন তা অন্তত ৪৮ ইঞ্চি হয়। লম্বায় অনেকে তিন গজ বা তারও বেশি কাপড় ব্যবহার করে রাজকীয় ভাব আনতে চান।
লেখা: প্রথম আলো